Pages

Sunday, January 22, 2012

পেশা মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও আপলোড

পেশা মূলত মোবাইল ফোনসেট সার্ভিসিং করা। তাদেরই মধ্যে অসাধু কিছু মানুষ বাড়তি আয়ের ধান্দায় নেমেছে অশ্লীল ভিডিও ব্যবসায়। নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে তারা অশ্লীল ভিডিও মোবাইল ফোনসেটে আপলোড করে অর্থ কামাচ্ছে। এতে প্রতিজনের গড়ে বাড়তি আয় হচ্ছে মাসিক প্রায় ৫০ হাজার টাকা। টাকার লোভে তাদের কাছে এখন মূল ব্যবসাটাই গৌণ হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অশ্লীল ভিডিও মোবাইল ফোনসেটে আপলোডকারী ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষেই গত কয়েক মাসে এ বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক। ক্রেতাদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সী স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী হওয়ায় এটা বড় একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ফার্মগেটের ফার্ম ভিউ মার্কেট থেকে সাত মেকানিককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের সূত্রেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। র‌্যাবের সূত্র জানিয়েছে, অশ্লীল ভিডিও আপলোডের বিরুদ্ধে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে।
র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মোবাইল ফোনসেটে ভিডিও দেখা সহজলভ্য হওয়ায় এসব অশ্লীল ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এখন রাজধানীতে প্রকাশ্যেই চলছে এ আপলোড ব্যবসা। প্রতিদিন প্রকাশ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে এসব চিত্র। আমরা এর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব।'
সূত্র জানায়, গত শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অশ্লীল ভিডিও বিক্রির দোকানের খোঁজ করেছেন র‌্যাবের গোয়েন্দারা। কিন্তু বেশির ভাগ দোকান ছিল বন্ধ। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বৃহস্পতিবার অভিযান চালানোর খবর পরদিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাবের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, অভিযানকালে সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতে কয়েকজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়, যারা নিজেদের মোবাইল ফোনসেটে অশ্লীল ভিডিও চিত্র আপলোড করে নিচ্ছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বন্ধুরা এসব অশ্লীল ভিডিও তাদের নিজ নিজ মোবাইল ফোনসেটে দেখিয়েছে। তা দেখে উৎসাহিত হয়েই তারা এ দোকান থেকে আপলোড নিতে এসেছে। তাদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ডেকে আনলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে র‌্যাব তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়।
সূত্র জানায়, অশ্লীল ভিডিও বিক্রেতারা আগে থেকেই আঁচ করতে পারে কারা তাদের গ্রাহক হতে পারে। তাদের আচরণও সেই অনুযায়ী। কোনো তরুণীকে ক্রেতা মনে হলে তারা ডেকে বলে, 'আপা, প্রাইভেট কিছু লাগবে?' তরুণীটি দাঁড়িয়ে গেলেই তারা বুঝতে পারে বাণিজ্য আসছে! প্রথমে তারা দোকানে রাখা মোবাইল ফোনসেট থেকে অশ্লীল ভিডিও দেখায় ক্রেতাকে। পছন্দেরটা দেখিয়ে দিলেই দোকানি দ্রুত তাদের মোবাইল ফোনসেটে তা আপলোড করে দেয়। বিনিময়ে হাতিয়ে নেয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা। গোয়েন্দা নজরদারিতে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
ফার্মগেটের ফার্ম ভিউ মার্কেটে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে সাত বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো জুলহাস, মোশারফ হোসেন, ওসমান গণি, সাইফুর রহমান টিপু, রায়হান, মোহাম্মদ আলী ও দিদার।
গ্রেপ্তারকৃতরা র‌্যাবকে জানায়, প্রতিদিন মোবাইল সেট মেরামতকাজের পাশাপাশি অশ্লীল ভিডিও আপলোড করে তাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। এভাবে প্রতি মাসে তাদের প্রায় অর্ধলাখ টাকা আয় হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত জুলহাস র‌্যাবকে জানায়, অনেক দিন ধরেই সে মোবাইল ফোনসেট মেকানিক পেশায় যুক্ত। কিছুদিন ধরে অশ্লীল ভিডিওর চাহিদা দেখে সে মেকানিক পেশার পাশাপাশি এ কাজও করছে। সে জানায়, এখন সে মোবাইল ফোনসেট মেরামতের চেয়ে অশ্লীল ছবি আপলোড দিতেই ব্যস্ত থাকে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই তাদের কাছে বেশি আসে। র‌্যাব কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে জুলহাস বলে, 'জানি, কাজটা ভালো হচ্ছে না। এর পরও লোভে পড়ে করতাম। আর করব না।'
র‌্যাব জানতে পেরেছে, অনেক শিক্ষার্থী তাদের মোবাইল ফোনসেটে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ওই সব দোকানে যায় কপি করতে। আর সেখান থেকেই কপি করে রেখে দেয় ওই সব মোবাইল ফোনসেট মেকানিক নামধারী। এ ছাড়া রাজধানীতে কয়েকটি চক্র এসব অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে উচ্চমূল্যে তা দোকানিদের কাছে বিক্রি করে। পরে তারা সেগুলো 'রেয়ার কালেকশন' উল্লেখ করে ক্রেতার মোবাইল ফোনসেটে বেশি দামে আপলোড করে থাকে।

1 comment:

  1. সবাই সামনে বিরোধিতা করে, কিন্তু পিছনে!! সবাই এক কাতারের মানুষ।

    ReplyDelete